ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

রামুতে অপ্রয়োজনীয় স্থানে ব্রীজ নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার  :::

কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের দুটি ব্রীজ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। খোদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বাররাই এ অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।

সরকারি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অপ্রয়োজনীয় স্থানে ব্রীজ নির্মাণ এবং নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার পূর্বক অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এবং ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এতে সরকারের প্রায় ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ব্রীজটির কোন সুফল এলাকাবাসী পাবেন না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

 এলাকাবাসীর অভিযোগ, ব্রীজ দুটি যেখানে নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল সেখানে না করে পিআইও-ঠিকাদার মিলে অন্যত্র নির্মাণ করায় ব্রীজ নির্মাণের লক্ষ্য পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। এলাকাবাসীর আরো অভিযোগ এ দুটি ব্রীজ নির্মাণে কমপক্ষে ১১ ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন এ ঠিকাদার। যা সম্প্রতি রামু উপজেলায় হওয়া সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। বিষয়টি কয়েকটি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা তদন্ত শুরু করার খবর পেয়ে ঠিকাদার ব্রীজ নির্মাণ না করেই তড়িঘড়ি করে ব্রীজ দু’টির শেষ বিল উত্তোলন করে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

অভিযোগে প্রকাশ গর্জনিয়া ইউনিয়নের একটি ছড়াতে আর জুমছড়ির অন্য আরেকটি ছড়াতে দু’টি ব্রীজ নির্মাণ করার কথা থাকলেও ১০ লাখ টাকা ভাগাভাগি করে পিআইওর সাথে যোগসাজশে ঠিকাদার ব্রীজ দুটি অন্যত্র নির্মাণ করে যাচ্ছে। বর্তমানে এ ব্রীজ দুটো নির্মিত হচ্ছে গর্জনিয়ার জুমছড়ি বিলে অপরটি বেলতলীর পরিবর্তে দু মাইল দুরে জাউচপাড়া নামক অপ্রয়োজনীয় এলাকায়।

তবে এসব বিষয়ে রামু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. জোবায়ের হাসান জানান, ব্রীজ দু’টির কাজ শেষ হয়ে গেছে। কাজের বিল দেওয়া হয়েছে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি জানান, কাজ শেষ হওয়া মাত্রই বিল পরিশোধ করা হবে এমন কোন কথা নেই। যেসব স্থানে এ দু’টি ব্রীজ হবার কথা সেখানে না হয়ে ভিন্নখানে নির্মাণের বিষয়ে পিআইও বলেন-এমনতো হবার কথা নয়।

স্থানীয়দের আরো অভিযোগ ব্রীজ দু’টির ঠিকাদার সরকারের নির্দেশকে অমান্য করে দ্বিতীয় দফায় ৭ লাখ টাকা মুনাফায় অদক্ষ সাব ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে ব্রীজের কাজ শেষ করার চেষ্টা করেও বিফল হয়েছেন। জুন ফাইনালের আগে এ ব্রীজ দুটোর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সাব ঠিকাদার এখনও মূল ঠিকাদারের কাজ বুঝিয়ে দিতে পারেননি। এমনকি একটি ব্রীজের ঢালাইয়ের কাজও শেষ হয়নি ডিও সময়ের মধ্যে। যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে সর্বত্র।

অপরদিকে যে দুর্নীতি তা হলো, ব্রীজ নির্মাণে বোল্ডার কংকর ব্যবহারের কথা থাকলেও ঠিকাদার ২নং নিম্নমানের কংকর ব্যবহার করছেন যা ব্রীজের স্থায়িত্বই কমিয়ে দেবে। উন্নত বালু ও সিমেন্ট ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় খালেরই বালু এবং নিম্নমানের সিমেন্ট। রড ব্যবহারে আরও বেশি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন এই ঠিকাদার।

ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, ব্রীজের নিচে বল্লি স্পার ও ডাইভার্শন না করা। যা থেকে ঠিকাদার আরও ১১ লাখ টাকা সাশ্রয় করেছেন এই খাতে। এভাবেই ইউনিয়নের নির্মিতব্য দুটি ব্রীজে ১১ ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। সরেজমিনে তদন্ত করা হলে এ ব্রীজ দুটি নির্মাণের দুর্নীতিতে দায়ী সব থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে। সব মিলিয়ে গর্জনিয়ায় এ দুটি ব্রীজ নির্মাণে সরকারের লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গেছে দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারের কারণে।

এ বিষয়ে গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ব্রীজ দুটির সাব ঠিকাদার একজন। মূল ঠিকাদারের বাড়ি চকরিয়া। সাত লড়্গ টাকা লাভ দিয়ে এ কাজ দুটি সাবঠিকাদার কিনে নিয়ে যেনতেনভাবে নির্মাণ করছেন। এখানে সিডিউল মোতাবেক কিছুই করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে ব্রীজ দুটি নির্মাণ কাজের অনিয়মের বিষয়ে অবহিত করলেও কোনো কথাই শুনেননি সাব ঠিকাদার।

এছাড়াও ব্রীজ দুটি নির্মাণ কাজের সময় শেষ হলেও ভূয়া বিল দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে বিল উত্তোলনের চেষ্টায় মরিয়া হয়েছেন সাব-ঠিকাদার। যা হলে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হবে। তাই সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সর্বস্তরের জনগণ।

পাঠকের মতামত: